যে ৯টি কাজ শিশুর / সন্তানের সামনে কখনোই করবেন না

যে ৯টি কাজ বাচ্চাদের সামনে কখনোই করবেন না, কারণ শিশুরা সবকিছু খুব দ্রুত শিখে নিতে পারে বা অনুকরণ করে। আর আপনার আচরণ সন্তানদের নৈতিক, মানসিক এবং ভবিষ্যৎ ব্যক্তিত্ব গঠনে গভীর ভাবে প্রভাব ফেলে।
নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা হলো যা শিশুর সামনে এড়িয়ে চলা উচিত।
শিশুর সামনে যে কাজগুলো কখনোই করবেন না
১। খোলামেলা হয়ে কাপড় পরিবর্তন করবেন না
সন্তানের বয়স ২ বছরের বেশী হলে তাদের সামনে খোলামেলা হয়ে কাপড় পরিবর্তন করা থেকে বিরত থাকুন। বিশেষ করে এমন কিছু মায়েরা রয়েছে যারা মনে করে বাচ্চা তো ছোট, বাচ্চা কি বুঝবে। দুই বছরের পরে শিশুরা অনেক কিছুই বুঝতে পারে এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় গুলো বড় হলে মনে থাকে।
২। ঝগড়া বা উচ্চস্বরে কথা বলবেন না
শিশুর সামনে স্বামী-স্ত্রী ঝগড়া করবেন না। অনেক পিতা-মাতা আছে সন্তানদের সামনে উচ্চস্বরে তর্ক, বিতর্ক বা মারামারি করে এগুলো থেকে বিরত থাকুন। এতে করে শিশুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে পারে এবং তাদের মধ্যে আগ্রাসী মনোভাব তৈরি হতে পারে।
৩। অশালীন ভাষা ব্যবহার করবেন না
শিশুরা খুব দ্রুত সবকিছু শিখে নিতে পারে। আপনার মুখে অশালীন বা আপত্তিকর ভাষা শুনে তারা সেগুলি ব্যবহার করা শুরু করতে পারে, যা তাদের সামাজিক আচরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
৪। মিথ্যা কথা বলে প্রতিশ্রুতি দিবেন না
অনেক পিতা-মাতা আছে ছোট ছোট মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে, খবরদার কখনোই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিবেন না। অনেক বাবা-মা বলে যে তুমি এটা করো তাহলে তোমাকে খেলনা কিনে দিব, সাইকেল কিনে দিব এই ধরনের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিবেন না। তাহলে আস্তে আস্তে আপনার প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে, যে বাবা তো এইটা বার বার বলেছে কিন্তু দেয়নি।
তাই আপনার যতটুকু সাধ্য আছে সেই টুকোই বলবেন মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিশ্বাস নষ্ট করবেন না। শিশুরা সত্য-মিথ্যার পার্থক্য শিখতে শুরু করে। আপনার মিথ্যা কথা বলা বা প্রতারণামূলক আচরণ তাদের মধ্যে সততার অভাব তৈরি করতে পারে এবং তারা বিশ্বাস হারাতে পারে।
৫। অন্যের সমালোচনা / গীবত করবেন না
সন্তানের সামনে অন্যের সমালোচনা বা গীবত করবেন না। তাহলে সন্তানের হিংসা বেড়ে যাবে, বিদ্বেষ বেড়ে যাবে। মানুষের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ তার ভিতরে থাকবে। এটি তাদের মধ্যে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের অভাব তৈরি করতে পারে।
৬। গোপন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন না
স্বামী-স্ত্রীর এমন কিছু আলোচনা আছে যা নিজেদের ভিতরে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। শিশুদের সামনে পারিবারিক বা ব্যক্তিগত গোপন বিষয় নিয়ে আলোচনা করলে তারা বিভ্রান্ত হতে পারে এবং অযথা দুশ্চিন্তা করতে পারে।
আবার অনেক বাবা-মা আছে ছোট শিশুর সামনেই খুনসুটি, বা জড়াজড়ি-ধরাধরি করে থাকে এগুলো করবেন না এতে করে আপনার শিশুর লজ্জাবোধের অবসান ঘটতে পারে।
৭। অশ্লীল বা অনুপযুক্ত কনটেন্ট দেখবেন না
শিশুর সামনে মোবাইল বা টিভিতে যেকোন ধরণের অশালীন ভিডিও, শর্ট ফিল্ম, নাটক বা কনটেন্ট দেখা একেবারেই অনুচিত। এতে শিশুর নৈতিকতা বিপন্ন হতে পারে।
৮। মোবাইল বা গ্যাজেট অতিরিক্ত ব্যবহার করবেন না
শিশুর সামনে মোবাইল বা ইলেকট্রনিক গ্যাজেট অতিরিক্ত ব্যবহার করবেন না। আপনি যদি সব সময় ফোন, ল্যাপটপ বা টিভিতে ব্যস্ত থাকেন, তাহলে শিশুরা মনে করতে পারে এটিই স্বাভাবিক। এর ফলে শিশু গ্যাজেটের প্রতি আসক্ত হতে পারে এবং শিশুর সামাজিক দক্ষতা ব্যাহত হতে পারে।
৯। মাদক বা সিগারেট গ্রহণ করবেন না
বাচ্চাদের সামনে মাদক বা সিগারেট গ্রহণ করবেন না। আপনি যদি বাচ্চার সামনে ধূমপান, মদ্যপান বা অন্য কোনো আসক্তিকর বস্তু গ্রহণ করেন, শিশুর মনে হতে পারে এগুলো গ্রহণযোগ্য আচরণ। আবার অনেক বাবা আছে, ছোট ছোট বাচ্চাদের টাকা দিয়ে দোকানে পাঠায় সিগারেট নিয়ে আসতে এবং সদাই খেতে এই ধরণের কাজ থেকে বিরত থাকুন।
উপসংহার
শিশুরা আপনার প্রতিচ্ছবি। তাই তাদের সামনে এমন কোনো কাজ করবেন না যা তাদের মানসিকতা বা আচরণে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাদের সামনে ইতিবাচক পরিবেশ বজায় রাখা খুবই জরুরি।