কখন বলতে হবে আলহামদুলিল্লাহ, ইনশাআল্লাহ ও মাশাআল্লাহ
সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, ইনশাআল্লাহ, নাউযুবিল্লাহ, মাশাআল্লাহ ও জাযাকাল্লাহ এমন কিছু শব্দ যা সকল মুসলিমের ব্যবহার করা উচিৎ। আমাদের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে ব্যবহার। ইসলাম ধর্মে সুন্দর ব্যবহারকে ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়। ইসলামে শিষ্টাচারকে ঈমানের অংশ বলা হয়েছে। কিন্তু দিন দিন শিষ্টাচারপূর্ণ আচরণ কমে যাচ্ছে।
ইসলামি পরিভাষায় নির্দিষ্ট কিছু শব্দ আছে, যেগুলো প্রায় সকল মুসলমানই জানেন। কিন্তু এর ব্যবহার করে না বা খুবই কম সংখ্যক মুসলমান ব্যবহার করে। তেমন কয়েকটি শব্দ এবং তার প্রয়োগ নিয়ে আলেচনা করা হলো।
চলুন জেনে নিই কখন কি বলা সুন্নত
১। আসসালামু আলাইকুমঃ এর অর্থ হল ‘আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক’। কারো সাথে দেখা হলে- হাই, হ্যালো না বলে বলুন:- আস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
২। বিসমিল্লাহঃ কোন কাজ শুরু করার আগে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা বা কিছু খাওয়া সময়, অথবা যে কোন ভালো কাজ শুরু করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলে শুরু করা সুন্নত। – বুখারীঃ ৫৩৭৬
৩। আলহামদুলিল্লাহঃ আলহামদুলিল্লাহ শব্দের অর্থ সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য। যে কোনো সুখবর বা ভালো অবস্থা সম্পর্কিত সংবাদের বিপরীতে আলহামদুলিল্লাহ বলতে হয়। যেমনঃ কেই যদি আপনাকে বলে কেমন আছেন? জবাবে আপনার বলা উচিত, আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। – ইবনে মাজাহঃ ৩৮০৫
৪। মাশাআল্লাহঃ মাশাআল্লাহ শব্দের অর্থ আল্লাহ যেমন চেয়েছেন। যে কোনো সুন্দর বা ব্যতিক্রম এবং ভালো বিষয়ের ব্যাপারে এটি বলা হয়। যেমনঃ মাশাআল্লাহ শিশুটি অনেক সুন্দর। তুমি তো অনেক বড় হয়ে গেছো মাশাআল্লাহ। – মুসলিমঃ ৩৫০৮
৫। হাঁচি দিলে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলাঃ কারো হাঁচি আসলে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ অথবা, ‘আলহামদুলিল্লাহি আ’লা কুল্লি হা-ল’ বলা। – আত তিরমিযীঃ ২৭৪১
৬। হাঁচিদাতাকে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলতে শুনলে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলাঃ আপনি যদি কোন হাঁচিদাতাকে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলতে শোনেন তাহলে আপনাকে জবাবে বলতে হবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’। – সহিহ বুখারীঃ ৬২২৪
ইয়ারহামুকাল্লাহ মানে, মহান আল্লাহ আপনার উপর রহমত অর্থাৎ, দয়াবর্ষন করুন।
৭। ইনশাআল্লাহঃ ইনশাআল্লাহ শব্দের অর্থ মহান আল্লাহ যদি চান। ভবিষ্যতে ঘটবে বা করবো এমন সকল বিষয়ে ইনশাআল্লাহ বলা সুন্নত। যেমনঃ ইনশাআল্লাহ আগামীকাল আমরা ঢাকা যাবো। অথবা কাজটি আগামীকাল শেষ হবে ইনশাআল্লাহ। – সূরা আল কাহাফ, আয়াত নং ২৩-২৪
৮। নাউযুবিল্লাহঃ নাউজুবিল্লাহ শব্দের অর্থ আমরা মহান আল্লাহর কাছে ……এর থেকে আশ্রয় চাই। কোন খারাপ কথা শুনলে বা মনে পড়লে কিংবা আল্লাহর আজাব-গজবের কথা শুনলে নাউজুবিল্লাহ বলা। – বুখারীঃ ৬৩৬২
৯। সুবহানাল্লাহঃ সুবহানাল্লাহ শব্দের অর্থ আল্লাহ পবিত্র ও সুমহান। আশ্চর্যজনক ভালো কোনো কাজ হতে দেখলে সাধারণত এটি বলা হয়ে থাকে। যেমনঃ সুবহানাল্লাহ! আগুনে সবকিছু পুরে গেলেও পবিত্র কুরআনুল কারীম অক্ষত আছেন।
১০। বারাকাল্লাহু ফিকঃ বারাকাল্লাহু ফিক অর্থ আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন বা আল্লাহ আপনার প্রতি অনুগ্রহ করুন। অন্যের ভালো কিছু দেখলে এই দোয়া করা সুন্নাহ।
১১। আসতাগফিরুল্লাহঃ আসতাগফিরুল্লাহ শব্দের অর্থ আমি মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। অনাকাঙ্খিত কোনো অন্যায় অথবা গুনাহ হয়ে গেলে আসতাগফিরুল্লাহ বলতে হয়। – সূরা মুহাম্মদঃ ১৯
১২। ইন্নালিল্লাহ বা ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনঃ এর অর্থ হলো, নিশ্চয়ই আমরা মহান আল্লাহর জন্য এবং আমরা তাঁর দিকেই ফিরে যাব। যেকোনো দুঃসংবাদ বা বিপদের সময় অথবা মানুষ মারা গেলে ইন্নালিল্লাহ পড়ার কথাটি হাদিসে রয়েছে। – মুসলিমঃ ২১২৬
১৩। লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহঃ অর্থ মহান আল্লাহর সাহায্য ও সহায়তা ছাড়া আর কোনো আশ্রয় ও সাহায্য নেই। শয়তানের কোনো ওয়াসওয়াসা বা দূরভিসন্ধিমূলক কোনো প্রতারণা থেকে বাঁচার জন্য এটি পরতে হয়।
১৪। আল্লাহু আকবরঃ অর্থ হচ্ছে আল্লাহ তাআলা সব কিছুর চেয়ে বড় এবং মহান। বিজয় লাভ করলে কিংবা বিজয় লাভের আশায় শ্লোগান দিতে আল্লাহু আকবর বলতে হয়। – বুখারীঃ ৬১০
১৫। জাযাকাল্লাহু খাইরানঃ কেউ আপনার কোনো উপকার করে তাহলে তাকে জাযাকাল্লাহু খাইরান বলুন। অর্থ মহান আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।
১৬। আল্লাহ হাফেজ ও ফি আমানিল্লাহঃ কারো কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় ‘টা টা বা বাই বাই’ না বলে বলুন, আল্লাহ হাফেজ অর্থাৎ মহান আল্লাহ সর্বোত্তম হেফাজতকারী, বা ফি আমানিল্লাহ তোমাকে আল্লাহর নিরাপত্তায় দিয়ে দিলাম।