রোগ-ব্যাধি ও প্রতিকারলাইফস্টাইলস্বাস্থ্য টিপস

আপনার কিডনি ঠিক আছে তো? কিডনী রোগের প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

আপনার কিডনি ঠিক আছে তো? কিডনী রোগের প্রতিরোধ ও চিকিৎসা। কিডনি ভালো রাখার উপায়। কিডনি সুস্থ রাখতে যেসব খাবার খেতে হবে এবং যেসব খাবার ভুলেও খাবেন না।

কিডনি আমাদের শরীরের অন্যতম একটি ভাইটাল অরগান। মানবদেহে কোমরের দু’পাশে আছে দুটি কিডনি। নানা কারণে আমাদের কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমনকি কিডনি বিকল পর্যন্ত হতে পারে। সুস্থ থাকার জন্য কিডনির সুস্থতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কিডনির কাজ কী?

১। আমাদের হার্ট শরীরের রক্তকে পাম্প করে এবং সেই রক্তের ২০% কিডনিতে পৌঁছায়। তারপর কিডনি সেই রক্তকে ফিল্টার করে থাকে। এটি শরীর থেকে দূষিত জিনিসকে ছেঁকে রক্তকে পরিষ্কার করে।

২। কিডনি মূত্রের সাহায্যে শরীরের খারাপ পদার্থকে বের করে দেয়।

আপনার কিডনি ভাল আছে কিনা জেনে নিন

আপনার কিডনি ভাল আছে কিনা জেনে নিতে পারবেন নিচের লক্ষণগুলো দেখেঃ কিডনি রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। ধীরে ধীরে কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকলে লক্ষণগুলো দেখা দিতে শুরু করে।

এর জন্য মাঝে মাঝে পরীক্ষা করে দেখা উচিত। যেমন রক্ত ​​বা প্রস্রাব পরীক্ষা করা হলে প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি রোগের সম্ভাব্য সমস্যা সনাক্ত করা সম্ভব হয় এবং চিকিৎসায় ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

কিডনি রোগের লক্ষণসমূহঃ

  • হাত, পা, পেট এবং মুখের চারপাশে ফুলে যাওয়া হলো কিডনি খারাপের প্রাথমিক লক্ষণ।
  • ওজন হ্রাস ও ক্ষুধা হ্রাস।
  • শরীরের ত্বকে র‍্যাশ বা দানা উঠা ও তীব্র চুলকানো বা ইচিং হওয়া। সাধারণত কিডনির সমস্যাজনিত ত্বকের র‍্যাশ হলে চিকিৎসায় এ ধরনের সমস্যার খুব কমই লাঘব হয়।
  • কিডনিতে পাথর, ক্যান্সার, টিউমারের কারণে প্রস্রাবের সাথে রক্ত যেতে পারে।
  • শ্বাসকষ্ট ও ক্লান্তি।
  • ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া অথবা প্রস্রাব কমে যাওয়া দুটোই কিডনির সমস্যার লক্ষণ।
  • ঘুমাতে অসুবিধা (অনিদ্রা)।
  • কিডনি ঠিকঠাক ভাবে কাজ না করলে আপনাকে দেখাবে ক্লান্ত ও অবসন্ন।
  • চুলকানি, ত্বকের সমস্যা ও রঙ পরিবর্তন।
  • কিডনি সমস্যা কারণে রক্ত সংবহনতন্ত্রে এক ধরনের Toxin বা ক্ষতিকর উপাদান তৈরি হয়। যার ফলশ্রুতিতে মুখের টেস্ট হ্রাসপায় এবং মেটালিক টেস্ট ও মুখের তীব্র গন্ধ অনুভূত হয়।
  • প্রায়শই বমি অথবা বমি বমি ভাব অনুভূত হয়।
  • কিডনি যদি স্বাভাবিক না থাকে তবে আক্রান্ত ব্যক্তির Anemia বা রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। ফলে শরীর হয়ে উঠে দুর্বল ও অলস। এছাড়া বারবার ঠাণ্ডা লাগা।
  • পুরুষদের মধ্যে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন।

পরীক্ষা করে চেক করা

  • মূত্র পরীক্ষা বা ACR
  • GFR কাউন্ট করতে রক্ত পরীক্ষা
  • আল্ট্রাসনোগ্রাম
  • সিরাম ক্রিয়েটিনিন

কিডনিতে কি কি রোগ হতে পারে

গোল্ড মেডেল প্রাপ্ত আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হারুন-অর রশিদ রচিত ‘কিডনী রোগ চিকিৎসা ও প্রতিকার’ বইয়ের তথ্য মতে সচারচর কিডনীর যে সমস্ত রোগ দেখা যায়; তাকে ২ ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারেঃ-

১# মেডিক্যাল সংক্রান্ত
২# শল্য সংক্রান্ত

মেডিক্যাল সংক্রান্ত কিডনি রোগ সাধারণত ঔষধের ভালো হয়ে যায়। শল্য সংক্রান্ত কিডনি রোগে সুস্থ্যতার জন্য অপারেশন করতে হয়।

১# মেডিক্যাল সংক্রান্ত কিডনী রোগ সমূহ

  • ইনফেকশন
  • কিডনীর ছাঁকনির বা নেফ্রাইটিস
  • আকস্মিক কিডনী বিকল
  • উচ্চরক্তচাপ, ডায়েবেটিস ও হৃদরোগ জনিত কিডনী রোগ
  • গর্ভাবস্থায় কিডনী রোগ
  • ঔষধের ব্যবহারে
  • বংশানুক্রমিক কিডনী রোগ

২# শল্য সংক্রান্ত

  • পাথর জনিত কিডনী রোগ
  • জন্মগত
  • প্রস্টেট গ্লান্ডের জটিলতায় কিডনী রোগ
  • কিডনীর সিস্ট এবং টিউমার

কিডনি ড্যামেজ ও পুরোপুরি অকেজো হলে অপারেশনের মাধ্যমে কিডনী প্রতিস্থাপন করা যায়।

কিডনি ইনফেকশনের লক্ষণ

কিডনি সংক্রমণ হল এক ধরনের মূত্রনালীর সংক্রমণ (ইউটিআই)। মূত্রনালী বা মূত্রাশয় থেকে প্রস্রাব বহনকারী নলটি থেকে কিডনির সংক্রমণ শুরু হতে পারে। এই সংক্রমণ এক বা উভয় কিডনিতে হতে পারে। কিডনির সংক্রমণকে পাইলোনেফ্রাইটিসও বলা হয়।

কিডনির রোগ দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। সঠিকভাবে চিকিৎসা না করা হলে এটি কিডনির দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি করতে পারে এমন কি ব্যাকটেরিয়া রক্তের প্রবাহে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

কিডনি ইনফেকশনের লক্ষণগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ

  • জ্বর
  • ঠাণ্ডা
  • প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া অনুভূতি
  • ঘনঘন প্রস্রাব
  • প্রস্রাব করার জন্য একটি দীর্ঘস্থায়ী তাগিদ
  • প্রস্রাবে রক্ত
  • পিঠে, পেটের সইডে বা কুঁচকিতে ব্যথা
  • প্রস্রাবে দুর্গন্ধ
  • বমি বমি ভাব এবং বমি

কিডনি রোগ কি ভাল হয়?

কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কিত আলোচনা থেকে এটা বোঝা যায় যে, সঠিক চিকিৎসায় কিডনি রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি রোগ ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ্য হওয়া যায় তবে আপনার কিডনির কার্যক্ষমতা যদি ১৫% নিচে নেমে যায় সেক্ষেত্রে ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি প্রতিস্থাপনই একমাত্র চিকিৎসা।

যেহেতু কিডনি রোগের চিকিৎসা দীর্ঘ মেয়াদী, কষ্টকর ও ব্যায় সাপেক্ষ বিধায় পূর্ব থেকে সচেতন থাকা ও স্বাস্থ্য সম্মত জীবনযাপন হতে পারে আপনার এই অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাধি থেকে রক্ষা। তবে কিডনিতে ইনফেকশন হলে পরীক্ষা করে চিকিৎসা নিলে ৭ থেকে ১৪ দিনের ভিতরে সুস্থ হয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।

কিডনি রোগ প্রতিরোধে করনীয়

কথায় আছে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই শ্রেয়। একবার কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে গেলে ভোগান্তির শেষ নাই। কারণ কিডনি রোগ যেমন জটিল তেমনি এর চিকিৎসাও ব্যয়বহুল। তাই কিডনি সুস্থ্য রাখতে আগে থেকেই যত্ন নেওয়া জরুরী।

কিডনি যে কেবল শরীরের রক্ত ফিল্টার বা বজ্য নিষ্কাশনই করে তাই নয়, এর পাশাপাশি রক্তকণিকা তৈরি, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, হাড়ের সুস্থতা, পানি ও লবণের ভারসাম্য রক্ষাসহ শরীরের আরও নানা রকম গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ হচ্ছে কিডনি বিকল হওয়ার প্রধান দুইটি কারণ।

১। যেহেতু অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ কিডনি বিকল করে দিতে পারে। তাই যাদের বয়স ৪০ পেরিয়েছে, তারা নিয়মিত রক্তচাপ মাপুন, রক্তচাপ বেশি থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ভাতের সাথে লবণ খাওয়ার অভ্যাস পরিহার করুণ। বয়স্করা অনেক সময় ওষুধ খেতে ভুলে যান এবং রক্তচাপ বাড়লেও বুঝতে পারেন না। তাই তাদের দিকে বিশেষ নজর রাখা প্রয়োজন।

.২। আমাদের দেশে কিডনি বিকল হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস। যাদের ডায়াবেটিস আছে, তারা বছরে অন্তত ১/২ বার কিডনি পরীক্ষা করুন। মনে রাখবেন, ডায়াবেটিস যেকোন বয়সে যে কারোরই হতে পারে।

৩। ধূমপান বিভিন্ন ধরনের অসুখের জন্ম দেয়। ধূমপান কিডনিতে রক্ত চলাচলে ব্যঘাত ঘটায়। কিডনিতে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই সুস্থ্য থাকতে ধূমপান ত্যাগ করুন আজকে থেকেই।

৪। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ইচ্ছা মত যখন-তখন দোকান থেকে ওষুধ কিনে খাবেন না। অনেক ওষুধ আছে যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর। অনেক ওষুধ আছে যা মাত্রাতিরিক্ত হলে কিডনির সমস্যা হয়ে থাকে। হারবাল ওষুধ, অতিরিক্ত ভিটামিন, ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্টও কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ করবেন না।

৫। স্থুলতার সাথে কিডনি রোগের অনেক সম্পর্ক রয়েছে। ২০১৭ সালের কিডনি দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল অধিক ওজন ও কিডনি রোগ। গবেষণায় দেখা গেছে কিডনিতে ক্যানসার, পাথর ও দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগের সঙ্গে স্থুলতার সম্পর্ক রয়েছে। তাছাড়া ওজন বাড়লে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। তাই প্রত্যেকের উচিৎ নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।

সুস্থ্য জীবনের জন্য খাবার তালিকায় সুষম খাদ্যা গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তোলা। শরীরকে সক্রিয় রাখতে নিয়মিত প্রচুর শাক-সবজি ও ফলমূল খেতে হবে। অতিরিক্ত মাত্রায় লাল মাংস খাবেন না ও পর্যাপ্ত পানি পানের অভ্যাস গড়ে তুলুন।

শিশুরা অনেক সময় ঠিকমতো পানি পান করে না। সেখান থেকে প্রস্রাপে ইনফেকশন হয়ে যায়। তাই তাদের দিকে আলদাভাবে খেয়াল রাখা জরুরী। অনেকেই আছেন প্রস্রাব আটকে রাখেন, বিশেষ করে মেয়েরা। এই কাজটি কিডনিতে মারাত্মক ক্ষতি করে।

কিডনি সুস্থ রাখতে যেসব খাবার খাবেন

বর্তমানে কিডনি রোগ মৃত্যুর অন্যমত কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিডনির সমস্যা দিনদিন বড়েই চলেছে সারা বিশ্বব্যাপি। তাই কিনডি সুস্থ রাখতে খাদ্যভাসের প্রতি সচেতন হওয়া জরুরি।

পানিঃ প্রতিদিন অন্তত ৮ থেকে ১২ গ্লাস পানি বা তরল খাবার খাওয়া উচিত।

ডিমের সাদা অংশঃ ডিমের সাদা অংশ কিডনি ভালো রাখতে অত্যন্ত কার্যকর। এটি উচ্চমানের কিডনিবান্ধব প্রোটিনের উৎস সরবরাহ করে।

ফুলকপিঃ ফোলেট ও খাদ্য আঁশের বড় উৎস ফুলকপি। ফুলকপি কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন সি, যা ইউরিনারি সিস্টেম ভালো রাখতে সহায়তা করে।

বাধাকপিঃ বাধাকপিতে রয়েছে ফাইটোকেমিক্যালস, ভিটামিন B6, ভিটামিন C, এবং ভিটামিন কে এবং আঁশ ও ফলিস এসিড। এই সবগুলো উপাদান ক্ষতিগ্রস্ত কিডনির মেরামত করে।

আপেলঃ আপেল কোষ্ঠ্য কাঠিন্য দূর করে, দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় এবং হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। এছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বা পঁচনরোধী উপাদান এবং ভিটামিন থাকায় আপেল কিডনির স্বাস্থ্যও ভালো রাখে।

আনারসঃ আনারস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। এতে উচ্চ মাত্রায় ফাইবার থাকে, যা কিডনির রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

অলিভ অয়েলঃ অলিভ অয়েলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রদাহরোধী ফ্যাটি এসিড যা জারণ কমিয়ে কিডনিকে সুরক্ষিত রাখে।

বেদানাঃ বেদানা খেলে স্মৃতিশক্তি প্রখর হয় এমনটাই মত অনেক বিশেষজ্ঞের। বেদানায় থাকে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কিডনিতে পাথর জমতে দেয় না।

শসাঃ শসায় রয়েছে ৯৬% জল। গবেষণা বলছে, নিয়মিত শসা খেলে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমে যা কিডনির পক্ষে যথেষ্ট উপকারী।

স্ট্রবেরিঃ বেরিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন সি, খাদ্য আঁশ এবং ফোলেট। স্ট্রবেরি, ক্র্যানবেরি, র্যাস্পবেরি এবং ব্লুবেরি কিডনির জন্য বেশ উপকারী বলে বিবেচিত হয়।

কিডনি সুস্থ রাখতে যেসব খাবার ভুলেও খাবেন না

  • অতিরিক্ত পার্সপ্রতিক্রিয়া আছে এই ধরনের ওষুধ খাবেন না।
  • গরুর মাংস খেলে কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে তাই অতিরিক্ত মাংস খাবেন না।
  • খাবার তালিকায় অতিরিক্ত প্রোটিন থাকলে তা পরিহার করুন।
  • আমাদের শরীরে প্রতিদিন মাত্র ১চা চামচ লবণের চাহিদা থাকে। তাই অতিরিক্ত লবণ খাওয়া পরিহার করুন।
  • রক্তের সুগারের পরিমাণ বেশি থাকলে মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • চিপস, ফাস্টফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং ইন্সট্যান্ট নুডলস কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
  • কোমল পানীয় বা সফট ড্রিঙ্কস এ ধরনের পানীয় কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
  • ধূমপান ও মদ্যপানের কারণে রক্ত চলাচলের কর্মক্ষমতাও হ্রাস পায়।

কিডনি রোগের প্রতিকার বা চিকিৎসা

কিডনি রোগের প্রতিকারে একজন নেফ্রোলজি বিশেষজ্ঞের পরামর্শে ঔষধ গ্রহণ করা জরুরী। নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং ওষুধ সেবনই পারে আপনাকে সুস্থ্য করে তুলতে। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ হচ্ছে কিডনি রোগের প্রধান দুইটি ঝুঁকির কারণ।

তাই খেয়াল রাখতে হবে যেন ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ যেন সবসময় নিয়ন্ত্রণে থাকে।

নিজেকে সুস্থ্য রাখতে নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করতে হবে।

শরীরে অতিরিক্ত ওজন থাকলে দ্রুত ওজন কমিয়ে ফেলতে হবে। যাদের অতিরিক্ত ওজন তাদের তুলনামূলক রোগ-ব্যাধি বেশি হয়ে থাকে।

ধূমপান থেকে নানা রকম রোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে তাই এখনই ধূমপান ছেড়ে দিন। ফাস্টফুড, তামাক, জর্দা এবং এলকোহল গ্রহণ ইত্যাদি বদভ্যাস পরিহার করুন।

অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন। অতিরিক্ত লবণ খেলে অনেক সমস্যা হয়। যেমনঃ- রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়, কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা সৃষ্টি করে, কিডনির কার্যকারিতা নষ্ট করে, লবণ শরীরে পানি ধরে রাখে, যে কারণে শরীরে ফোলাভাব সৃষ্টি হয়।

নিয়মিত বেশি বেশি শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

ব্যথানাশক ঔষধ সেবনে সতর্কতা অবলম্বন করুন। যতটা সম্ভব ব্যথার ঔষধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

রাতে নিয়মিত কমপক্ষে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।

রোগ-ব্যাধি ও প্রতিকার সম্পর্কে আরো পোস্ট পড়ুন

কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

কিডনিতে নানা ধরণের রোগ হয়ে থাকে। এক এক ধরণের কিডনি রোগে জন্য প্রয়োজন একেক ধরণের ঘরোয়া চিকিৎসা। যেমনঃ-

১। পানিঃ একজন সুস্থ্য ব্যক্তির দৈনিক গড়ে ২-৩ লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। কিডনিতে ছোট আকারের পাথর হলে প্রচুর পানি পানের মাধ্যমে তা সারিয়ে তোলা সম্ভব। এছাড়া কিডনিতে বা প্রসাবে ইনফেকশন ভালো করতে বেশি বেশি পানি পান বেশ কার্যকর ভুমিকা রাখে। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে কারণ কিছু কিডনি রোগ আছে যেইগুলো অতিরিক্ত পানি পান করায় ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষ করে শরীরে যদি পানি জমে থাকে বা শরীর পানিতে ফুলে যায় সেই ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পানি পান করা যাবে না।

২। তুলসী পাতাঃ কিডনির পাথর ভেঙে ফেলতে তুলসী গাছের পাতায় থাকা অ্যাসিটিক অ্যাসিড বেশ কার্যকর। তাই প্রতিদিন অন্তত দুইবার তুলসী পাতার রস খেলে উপকার পাওয়া যায়। অথবা তুলসীর পাতা দিয়ে চা পান করতে পারেন।

৩। লেবুঃ পাতিলেবুর রসে থাকে সাইট্রিক অ্যাসিড, এই অ্যাসিড ক্যালসিয়ামজাত পাথর তৈরিতে বাধা দেয় এবং ছোট পাথরগুলোকে ভেঙে বের করে দেয়। তাই কিডনি পাথর অপসারণে নিয়মিত লেবুর রস পান করুন।

৪। ভিনিগারঃ এক চামচ আপেল সিডার ভিনিগারের সঙ্গে দুই টেবিল চামচ পানি মিশিয়ে নিয়মিত পান করুন। আপেল সিডার ভিনিগারে থাকা অ্যাসিটিক অ্যাসিড কিডনিতে থাকা পাথর সরাতে সাহায্য করে এবং ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে। তবে দিনে ১৬চামচের বেশি খাবেন না।

৫। ডালিমের রসঃ ডালিমের রসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট কিডনিকে সুস্থ রাখতে এবং পাথর ও অন্যান্য টক্সিনকে দূর করতে সাহায্য করে।

৬। মেথি বীজঃ এক কাপ ফোটানো পানিতে ১ থেকে ২ চা চামচ শুকনো মেথি বীজ ভিজিয়ে রেখে প্রতিদিন পান করুন। মেথি বীজ কিডনির পাথর প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

৭। কালোজিরাঃ ২৫০মিলি গরম পানিতে হাফ চা চামচ শুকনো কালোজিরা বীজ দিয়ে দিনে দুবার পান করুন। কারণ একটি গবেষণা অনুযায়ী, কালোজিরা বীজ কিডনিতে ক্যালসিয়াম অক্সালেট পাথর গঠনে বাধা দেয়।

পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিন। কিডনি ইনফেকশনের পর প্রচুর পরিমাণ বিশ্রাম শরীরকে সুস্থ্য করতে সাহায্য করে। তবে যেকোন চিকিৎসা গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেওয়া উচিত।

যে সকল ঔষধ খেলে কিডনি নষ্ট হতে পারে

আমরা অসুস্থতায় জন্য অনেক ধরনের ঔষধ খেয়ে থাকি কিন্তু আপনি জানেন কি কিছু ওষুধ আপনার কিডনি মারাত্মক ভাবে ক্ষতি করতে পারে। কিছু সিরিয়াস ঔষধ যা তাৎক্ষনিক কিডনি অকেজো করতে পারে, তার তালিকা নিচে দেওয়া হলো।

  • এন্টিবায়োটিক ঔষধঃ সিপ্রোফ্লক্সাসিন, জেন্টামাইসিন, রিফামপিসিন, স্ট্রেপটমাইসিন, মিথাইসিলিন, সালফোনামাইড এবং সেফালোসপোরিন।
  • ব্যাথানাশক ঔষধঃ নেফ্রোক্সিন, ডাইক্লোফেনাক এবং কক্সবি ইনহিবিটর।
  • গেস্ট্রিক আলসার ঔষধঃ অমিপ্রাজল, পেন্ডাপ্রাজল এবং লেনসোপ্রাজল।
  • এসি ইনহিবিটর এবং এআরবই গ্রুপের ঔষধ।
  • রেনাল এনজিওগ্রাম, আইভিইউ, কার্ডিয়াক এনজিওগ্রাম অথবা সিটিস্ক্যান এর জন্য ব্যবহৃত ডাই।

শুধু এই গুলোই না যে কোন ঔষধ খাওয়ার আগে তার পার্সপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে পূর্বে জেনে নিন। কখনই নিজের ইচ্ছেমতো অতিরিক্ত ঔষধ খাবেন না। মনে রাখবেন প্রায় সকল ধরনের ঔষধে কম-বেশী পার্সপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।

কিডনি রোগের ঔষধের নাম

কিডনি রোগের চিকিৎসায় ডাক্তার রোগের কারণ সনাক্ত করে তা নিরাময়ে বেশি জোর দিয়ে থাকেন। রোগীর ডায়েবেটিস ও উচ্চরক্ত চাপ বা অন্য কোন সমস্যা থাকলে প্রথমেই তা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

ডাক্তার রোগীর অবস্থা ভেদে নানা ধরণের ঔষধ দিয়ে থাকেন, যার মধ্যে আছেঃ-

  • Invokana(Canagliflozin)
  • Generic Renvela (Sevelamer Carbonate)
  • Farxiga (Dapagliflozin)
  • Velphoro (Sucroferric Oxyhydroxide)
  • Generic Phoslo (Calcium Acetate and Eliphos)
  • Procrit
  • Generic Sensipar (Cinacalcet)

কিডনি রোগের হোমিও ঔষধের নাম

কিডনি রোগের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথিতে বেশ কার্যকর কয়েকটি রেমিডি রয়েছে। যেমনঃ- এপিস মেলিফিকা, অরাম মুরিয়াটিকাম, আর্সেনিকাম, বেলাডোনা, ক‍্যান্থারিস, বেলাডোনা এবং কোনাভ্যালারিয়া।

রোগের ধরণ, লক্ষণ ও পর্যায় ভেদে এই ঔষধগুলি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। ঔষধের সঠিক মাত্রা ও প্রয়োগ বিধি জানতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থাকা জরুরী।

* তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন অবস্থায় কোন ধরনের ঔষধ গ্রহণ করা যাবে না।

শেষকথা

কিডনি রোগের লক্ষণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্পর্কে যে আলোচনা করা হল তা থেকে এটা নিশ্চয়ই উপলব্ধি হয়েছে যে, কিডনি রোগ খুবই মারাত্মক একটি রোগ। তাই অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণের পাশাপাশি একটি আদর্শ জীবন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button