আরবি ১২ মাসের নাম ও নামকরণের কারণ
আসসালামু আলাইকুম।
নিচে আরবি ১২ মাসের নাম এবং তাদের নামকরণের সংক্ষিপ্ত কারণ তুলে ধরা হলো। আরবি মাসগুলো হলো মুহররম, সাফর, রবিউল আউয়াল, রবিউস সানি, জমাদিউল আউয়াল, জমাদিউস সানি, রজব, শাবান, রমজান, শাওয়াল, জ্বিলকদ, এবং জ্বিলহজ্জ।
ইসলামিক ক্যালেন্ডারে আরবি ১২ মাসের নাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা.) হিজরি সনের সূচনা করেন। তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতে এই সন চালু করেন। হিজরি বছরের মোট মাসের সংখ্যা বারোটি, ঠিক যেমন আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেছেন — তাঁর নিকটেও এক বছরে ১২টি মাস রয়েছে।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন—
‘নিশ্চয়ই আসমান ও জমিন সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর কাছে গণনার মাস বারোটি, এর মধ্যে চারটি সম্মানিত।’ – সুরা তাওবা, আয়াতঃ ৩৬
আরবি প্রথম মাসের নাম মুহররম (مُحَرَّم) এবং আরবি শেষ মাসের নাম জ্বিলহজ্জ (ذُو الحِجَّة) ।
আরবি ১২ মাসের নাম বাংলা এবং ইংরেজি উচ্চারন
বাংলায় উচ্চারন | ইংরেজি উচ্চারন | আরবি | অর্থ |
মুহররম | Muharram | مُحَرَّم | নিষিদ্ধ |
সফর | Safar | صَفَر | শূন্য, ভ্রমণ |
রবিউল আউয়াল | Rabi’ al-Awwal | رَبِيعُ الأَوَّلِ | প্রথম বসন্ত |
রবিউস সানি | Rabi’ al-Thani | رَبِيعُ الثَّانِي | দ্বিতীয় বসন্ত |
জমাদিউল আউয়াল | Jumada al-Awwal | جُمَادَىٰ الأُولَىٰ | প্রথম শুকনো ভূমিখণ্ড |
জমাদিউস সানি | Jumada al-Thani | جُمَادَىٰ الآخِرَة | দ্বিতীয় শুকনো ভূমিখণ্ড |
রজব | Rajab | رَجَب | শ্রদ্ধা, সম্মান |
শা’বান | Sha’ban | شَعْبَان | বিক্ষিপ্ত |
রমজান | Ramadan | رَمَضَان | জ্বালানো-পোড়ানো |
শাওয়াল | Shawwal | شَوَّال | উত্থিত |
জ্বিলকদ | Dhu al-Qi’dah | ذُو القَعْدَة | যুদ্ধবিরতির মাস |
জ্বিলহজ্জ | Dhu al-Hijjah | ذُو الحِجَّة | হজ্জের মাস |
আরবি বারো মাসের নাম এবং নামকরণের কারণ
১। মুহররম – محرّم (অর্থঃ নিষিদ্ধ)
মুহররম ইসলামিক ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস কারণ এই মাসের ১০ম দিনে আশুরা পালিত হয়। এই মাসে যুদ্ধ নিষিদ্ধ (হারাম) করা হয়েছে, এজন্য মুহাররম মাসকে পবিত্র ও সম্মানিত মাস হিসেবে গণ্য করা হয়।
২। সফর – صفر (অর্থঃ রিক্ত, শূন্য, ভ্রমণ)
সফর মাসের নামকরণের কারণ সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত রয়েছে।
সফর শব্দের অর্থ শূন্য হওয়া। জাহেলি যুগে এই মাসে আরবরা যুদ্ধের জন্য বের হয়ে পড়ত, তখন তাদের ঘরবাড়ি ফাঁকা হয়ে যেত। অন্য এক মতে, তারা শত্রুদের যুদ্ধে পরাজিত করে তাদের সমস্ত সম্পদ লুটপাট করত এই কারণেই এ মাসের নামকরণ করা হয়েছে সফর।
সফর শব্দের আরেকটি অর্থ হলো ‘ভ্রমণ’। সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মতানুসারে, তৎকালীন আরবরা এই মাসে ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে ব্যাপকভাবে ভ্রমণ করত। তাই এ মাসের নাম রাখা হয়েছে সফর।
৩। রবিউল আউয়াল – ربيع الأولي (অর্থঃ প্রথম বসন্ত)
“রবি” মানে বসন্ত, “আউয়াল” মানে প্রথম। এই মাসে বসন্তের সূচনা হত বলে এই নাম দেওয়া হয়েছে। রবিউল আউয়াল মাসটি আমাদের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্মের মাস। ১২ রবিউল আউয়াল বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্মদিন, যাকে ঈদে মিলাদুন্নবী বলা হয়।
৪। রবিউস সানি – ربيع الاخري (অর্থঃ দ্বিতীয় বসন্ত)
এই সময়ের জন্য একটি নাম নির্ধারণ করতে চাইলেন লোকজন। তখন ছিল বসন্তের শেষ অংশ, তাই তারা এ মাসের নাম রাখে রবিউস সানি বা রবিউল আখের, যার অর্থ ‘শেষ বসন্ত’।
৫। জমাদিউল আউয়াল – جمادى الأولی (অর্থঃ প্রথম শুকনো ভূমিখণ্ড)
‘জুমাদা’ মানে জমে যাওয়া বা শক্ত হওয়া। এই মাসে প্রচণ্ড শীত পড়ত, ফলে পানি পর্যন্ত জমে যেত। তাই শীতের প্রথম অংশ হিসেবে এ নামকরণ।
৬। জমাদিউস সানি – جمادي الآخر ي (অর্থঃ দ্বিতীয় শুকনো ভূমিখণ্ড)
শীতের শেষাংশ বোঝাতে এই মাসের নামকরণ করা হয়েছে।
৭। রজব – رجب (অর্থঃ শ্রদ্ধা, সম্মান)
রজব শব্দের অর্থ ‘সম্মান করা’। আরবরা এ মাসকে বেশ সম্মান করত এবং একে আল্লাহর মাস বলে অভিহিত করত এবং এই মাসে যুদ্ধ নিষিদ্ধ ছিল। এ কারণেই এই মাসের নাম রাখা হয়েছে রজব।
৮। শা’বান – شعبان (অর্থঃ বিক্ষিপ্ত)
আরবি শাব শব্দ থেকে শাবান এসেছে। ‘শাব’ মানে ছড়িয়ে পড়া। আরবরা যুদ্ধ বা খাবারের সন্ধানে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ত, এজন্য এর নাম শাবান।
৯। রমজান – رمضان (অর্থঃ দহন বা জ্বালানো-পোড়ানো)
রমজান শব্দের অর্থ হলো ‘জ্বালানো-পোড়ানো’। এই মাসে মুমিনদের গুনাহগুলো জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়া হয়, তাই এই মাসের নাম রাখা হয়েছে রমজান।
১০। শাওয়াল – شوّال (অর্থঃ উত্থিত)
শাওয়াল শব্দটি এসেছে ‘শাওল’ মূল ধাতু থেকে, যার অর্থ হলো ‘বাইরে গমন করা’। এই সময় আরবের লোকেরা সাধারণত ভ্রমণে বের হতো, তাই এই মাসটির নাম শাওয়াল রাখা হয়েছে।
১১। জ্বিলকদ – ذو القعدة (অর্থঃ সাময়িক যুদ্ধবিরতির মাস)
‘জিল’ অর্থ হলো ‘ওয়ালা’ এবং ‘কাদাহ’ অর্থ হলো ‘বসা’। আরবরা এ মাসে যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ করে বাড়িতে বসে থাকত, তাই এই মাসটির নাম রাখা হয় জিলকদ। এ মাসটি সম্মানিত মাসগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
১২। জ্বিলহজ্জ – ذو الحجة (অর্থঃ হজ্জের মাস)
এই মাসে মুসলিমরা মক্কায় কাবার উদ্দেশ্যে হজ করতে যান। হজ অনুষ্ঠিত হয় এ মাসের ৮, ৯ এবং ১০ তারিখে। ঈদুল আযহা শুরু হয় ১০ তারিখ এবং ১২ তারিখ সূর্যাস্তের সাথে শেষ হয়। এই মাসে যুদ্ধ নিষিদ্ধ।
আরও পড়ুনঃ
আমাদের ব্লগের আপডেট নোটিফিকেশন পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক এবং টেলিগ্রাম গ্রুপে।
আরবি ১২ মাসের নাম, আরবি বারো মাসের নাম নামকরণের কারণ, আরবি ১২ মাসের নাম আরবিতে, আরবি বারো মাসের নাম বাংলায়, ইসলামের ১২ মাসের নাম, আরবি মাসের নাম অর্থ সহ।