ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ৷ বছর ঘুরে আমাদের মাঝে হাজির হয় ঈদ। প্রতিবছর শাওয়াল মাসের প্রথম দিনটি ঈদ-উল-ফিতর উদযাপিত হয় এবং জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদ-উল-আজহা পালিত হয়।
এই দিনে ঈদের নামাজ পড়া ওয়াজিব। ঈদুল ফিতর অর্থ ‘রোজা বা উপবাস ভাঙার আনন্দ’ আর ঈদুল আযহা মূলত আরবি বাক্যাংশ এর অর্থ হলো ‘ত্যাগের উৎসব’। আজকে আমরা শেয়ার করবো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজ পড়ার নিয়ম ও দোয়া।
ইতিহাস
মহানবী হজরত মহম্মদ (সাঃ) মদিনায় হিজরতের পরেই ঈদ উল-ফিতর উৎসব পালন শুরু হয়। কিছু ঐতিহাসিক কাহিনী অনুসারে, নবী মহম্মদ (সাঃ) মদিনায় এসে দেখলেন মদিনাবাসী বছরে দুটি দিবসে আনন্দ উল্লাস করে থাকে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এই দিবস দুটি কী? তারা জানালেন, নওরোজ এবং মিহিরজান।
শরতের পূর্ণিমায় পালিত হয় নওরোজ এবং বসন্তের পূর্ণিমায় পালিত হয় মিহিরজান উৎসব। তখন নবী মহম্মদ (সাঃ) বললেন, আল্লাহ তোমাদের এই দিবস দুটির পরিবর্তে উত্তম দুটি দিবস দান করেছেন, তা হলো ঈদ উল-আজহা এবং ঈদ উল-ফিতরের দিন।
ঈদুল আজহার নামাজ পড়ার নিয়ম
ঈদের নামাজ ২ রাকাত, যা আদায় করা ওয়াজিব এবং জামাআতে আদায় করতে হয়। এই ২ রাকাত নামাজে অতিরিক্ত ৬ তাকবির দিতে হয়।
ঈদের নামাজের আগে বা পরে কোনো নফল বা সুন্নত নামাজ নেই। এমনকি ঈদের নামাজের জন্য কোনো আজান ও ইক্বামতেরও প্রয়োজন হয় না।
ঈদের নামাজ আদায় করার শর্ত
- ওয়াকফকৃত জায়গায়
- কমপক্ষে ৩ জনের জামায়াত হতে হবে
- খুতবা পাঠ
- সূর্য উদিত হওয়ার পর এবং দ্বিপ্রহরের আগে পড়া
প্রথম রাকাতঃ প্রথমে ঈদের নামাজের নিয়ত করতে হবে
আরবি নিয়তঃ “নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা আলা রাকয়াতাই ছালাতি ঈদিল ফিতর মাআ ছিত্তাতি তাকবীরাতি ওয়াজিবুল্লাহি তা আলা ইক্বতাদাইতু বিহাজাল ইমামি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।”
যদি কেউ আরবি নিয়াত করতে না পারে তাহলে বাংলায় নিয়াত করবে।
বাংলা নিয়তঃ আল্লাহ তাআলার উদ্দেশে কিবলামুখী হয়ে ঈদুল ফিতরের/ঈদুল আজহার ২ রাকাআত ওয়াজিব নামাজ ৬ তাকবিরের সাথে ইমামে পেছনে আদায় করছি বলে নিয়ত বাঁধতে হয়।
প্রথমেই তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নিয়ত বাঁধবেন। ইমাম ও মুসল্লিরা নিয়ত বাঁধার পর ছানা পড়তে হবে। অর্থাৎ এ দোয়াটি পড়বেনঃ
“সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা ঝাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুক।”
তারপর ইমামের উচ্চস্বরে তাকবির বলার সঙ্গে সঙ্গে মুসল্লিরাও তাকবির বলবেন। প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবির বলার সময় উভয় হাত কান বরাবর উঠিয়ে ছেড়ে দেবেন। তৃতীয় তাকবিরের সময় উভয় হাত কান বরাবর উঠিয়ে না ছেড়ে হাত বাঁধবেন।
এরপর ইমাম সাহেব সুরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সুরা মিলিয়ে রুকু-সিজদা করবেন। মুসল্লিরাও ইমামের সঙ্গ রুকু-সিজদা করবেন।
দ্বিতীয় রাকাতঃ ইমাম সাহেব দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ফাতিহা ও অন্য একটি সুরা মেলানোর পর রুকুতে যাওয়ার আগে অতিরিক্ত ৩ তাকবির প্রথম রাকাআতের মতোই আদায় করবেন। এরপর রুকু-সিজদা করার পর অন্যান্য নামাজের মতোই সালাম ফিরানোর মাধ্যমে নামাজ শেষ করতে হবে।
ঈদের খুতবা শোনা
ইমাম কর্তৃক খুতবা পড়া সুন্নত এবং খুতবা শোনা ওয়াজিব। জুমার নামাজের ন্যায় প্রথমে বিষয় ভিত্তিক খুতবা এবং পরে সানি খুৎবা পাঠ করতে হয়। খুতবা মনোযোসহ সোনা উত্তম। খুতবার পরে ইমামের সাথে দোয়া করে ঈদগা মাঠ পরিত্যাগ করবেন।
আরো পড়ুনঃ
ঈদের দিনে করণীয়
১। রোজা না রাখাঃ ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম
২। ভোরে ঘুম থেকে উঠা
৩। মিস্ওয়াক করা
৪। ঈদের নামাজের পূর্বে গোসল করা
৫। সামর্থ্য অনুযায়ী নতুন বা সুন্দর পোশাক পরিধান করা
৬। রোজার ঈদে ঈদগাহ যাওয়ার পূর্বে কিছু খেয়ে যাওয়া
৭। কোরবানি ঈদের দিন সকালে কিছু না খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া
৮। আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা
৯। সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা
১০। ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া
১১। ঈদের নামাজ পড়ার জন্য এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আশা
১২। ঈদের দিনে পারস্পারিক শুভেচ্ছা বিনিময় করা
১৩। খুশি প্রকাশ করা।
১৪। নিম্নোক্ত দোয়া পড়তে পড়তে ঈদগাহে যাওয়া:
الله اكبر الله اكبر لا اله الا الله والله اكبر الله اكبر ولله الحمد
উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হাম্দ।
অর্থঃ আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই; আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; সব প্রশংসা মহান আল্লাহ জন্য।
সবাইকে প্রতিবছর সুন্দর ও সুস্থ ভাবে ঈদের নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।